ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের বারুইজীবিপাড়া গ্রামের রাস্তার ওপর স্থায়ীভাবে পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ করছেন প্রবাসী আক্তার হোসেন। তিনি কালিকচ্ছ এলাকার মৃত শরাফত আলীর ছেলে।
কালিকচ্ছ উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন জনগুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তার প্রবেশমুখ দখল করে এই বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ চললেও স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে নজরই দিচ্ছেন না। যদিও ভুক্তভোগী গ্রামের লোকজন এ বিষয়ে গত সপ্তাহে লিখিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে দিয়ে দায়িত্বশীল সকলকে অবগত করিয়েছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বারুইজীবিপাড়া গ্রামের একমাত্র রাস্তার প্রবেশ মুখে পূর্ব পাশে পাঁচতলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী ইমরান মিয়া পুবের আলোকে জানান, বারুইজীবিপাড়া গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। ক’বছর আগে গ্রামের সড়কটি সরকারি অর্থায়নে পাকা করা হয়। সড়কের প্রবেশ মুখে অন্তত আড়াই ফুট জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন প্রবাসী আক্তার হোসেন। ফলে সড়ক সরু হয়ে যাচ্ছে; এ সড়কে যানবাহন ঢুকতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। এ সমস্যা সমাধানে আমরা লিখিত অভিযোগ দিলেও ভূমি কর্মকর্তারা বিষয়টি আমলেই নিচ্ছেন না।
এ বহুতল ভবন নির্মাণ কাজে তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রবাসী আক্তার হোসেনের মামা খালেক মিয়া পুবের আলোকে জানান, পুরাতন নকশা (জমির ম্যাপ) দেখে জায়গা মাপজোখ করে আমরা এখানে পাঁচতলা ভবনের কাজ শুরু করি। কিন্তু পরে নতুন নকশায় মাপজোখে দেখা গেছে সড়কের কিছু অংশ নির্মানাধীন ভবনে ঢুকেছে। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সমাধান করে দেবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
কালিকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শরাফত আলী পুবের আলোকে জানান, আগের মাপজোখে রাস্তার জায়গা ঠিকই ছিল; কিন্তু পরে মাপজোখে দেখা যায় রাস্তার কিছু অংশ সেই ভবনে গিয়ে ঢুকেছে। গ্রামের লোকজন ভূমি অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কালিকচ্ছ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত আলী জানান, উনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উপজেলা থেকে অভিযোগপত্রটি এলে তিনি সরেজমিনে মাপজোখ করে বিষয়টি সমাধান দেবেন। সেই পর্যন্ত তাদেরকে ভবনের এ অংশের কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
সরাইলে ভবন নির্মাণে মানা হচ্ছে না বিল্ডিং কোড :
সরাইলে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব বহুতল ভবন নির্মাণে নির্দিষ্ট সরকারি বিধিমালা থাকা সত্ত্বেও তা মানা হচ্ছে না। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেয় না ভবন নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ। ভবন নির্মাণ বিধিমালাকে অনুসরণ না করায় সরাইলে বিভিন্ন এলাকাতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বহুতল ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে। সরাইলে এক শ্রেণির লোক বহুতল ভবন গড়ে তোলার প্রবণতায় মগ্ন। অপরিকল্পিত এসব ভবন নির্মাণের ফলে কৃষিজমি হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাস্তাঘাট এবং পানি নিষ্কাশনের পথগুলো সরু হয়ে আসছে। বিশেষ করে রাস্তাঘাট অপেক্ষাকৃত সরু ও ঘিঞ্জি হওয়ার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়ছে।
উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে বিলাসবহুল বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চলছেই। আর এসব ভবন নির্মাণের কারণে সরু হয়ে যাচ্ছে পানি নিষ্কাশনের প্রধান খালগুলো। বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক লাইনের নিরাপদ দূরত্ব সম্পর্কিত স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক সার্টিফিকেট নেওয়া এবং ভূমি ব্যবহার সম্পর্কে নীতিমালা অনুসরণের বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব নির্মাণের ক্ষেত্রে এ নিয়মের বালাই না মেনে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে।
জানা যায়, ইমারত বিধিমালা ১৯৯৬ অনুযায়ী চারতলা পর্যন্ত ইমারত নির্মাণ করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ডিপ্লোমা সার্টিফিকেটধারী এবং পাঁচতলা বা তার অধিক তলার ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে স্নাতক ডিগ্রিধারী স্বীকৃত প্রকৌশলী কর্তৃক নকশা নির্ধারণ করতে হয়। ফরম ও ফি জমা দিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে হয়। শহর এলাকায় ভবন নির্মাণের সর্বাধিক উচ্চতা সম্মুখবর্তী রাস্তার প্রস্থ এবং রাস্তার মধ্যবর্তী খোলা স্থানের যোগফলের অধিক হবে না বলে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ এ পরিষ্কার ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া বাড়িঘর নির্মাণের পূর্বে ওই এলাকায় গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহন যাতায়াতের জন্য এবং গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা রেখে ফায়ার সার্ভিস বা অগ্নিনির্বাপক থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিতে হয়। বহুতল ভবন নির্মাণের অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয সয়েল টেস্টও করা হয় না। এতে করে ভূমিকম্পের আশঙ্কায় বহুতল ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
(পুবের আলো/সিয়াম/ইফরান/আওয়াল খান)