পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি নেতারা। ভারতের বিধান সভায় মমতার মুখে জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা। বিজেপি নেতাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গকে ‘গ্রেটার (বৃহত্তর) বাংলাদেশ’ বানাতে চাইছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল!
বৃহস্পতিবার সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করে এমনই অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার দাবি, তৃণমূল যে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দেয়, তা ‘ইসলামিক বাংলাদেশের’ জাতীয় স্লোগান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নাম না লিখলেও দিলীপ তার পোস্টে অভিযোগ করেছেন, ‘মাননীয়া লড়ছেন গ্রেটার বাংলাদেশের লক্ষ্যে’। খবর আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এর আগেও বিজেপি ‘নাগরিকত্ব আইন’ বা ‘অনুপ্রবেশ’ ইস্যুতে একাধিকবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিজেপি বলেছে, পশ্চিমবঙ্গকে ‘পশ্চিম বাংলাদেশ’ বানাতে চাইছে তৃণমূল। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারেও এই কথা বলছে বিজেপির উদ্বাস্তু শাখা।
ওই শাখার রাজ্য আহ্বায়ক মোহিত রায় বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এটা মনে রাখতে হবে, ‘জয় বাংলা’ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘোষণা করা জাতীয় স্লোগান। সেটা এই রাজ্যে ব্যবহার করার লক্ষ্য তোষণ রাজনীতি। এই স্লোগানের মধ্যে লুকিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গকে ভারত থেকে আলাদা করার কথা।’
দিলীপের সুরে সুর মিলিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, ‘জয় বাংলা’ শেখ মুজিবুর রহমানের স্লোগান। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ প্রথম বেতার ভাষণে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ব্যবহার করেছিলেন। এখনো বাংলাদেশে এটি সমানভাবে রাজনৈতিক স্লোগান হিসাবে ব্যবহার হয়। সেই স্লোগান এখন কেন মাননীয়া ব্যবহার করছেন তা মানুষ বুঝতে পারছে।’
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে নেতাজি জয়ন্তীতে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বক্তৃতা না করলেও প্রতিবাদ জানানোর শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছিলেন। দিলীপের এই পোস্টের পর জল্পনা ছড়িয়েছে, নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠা নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা বিজেপি কি তার পালটা দিতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে হাতিয়ার করছে? তৃণমূলের গ্রেটার বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য রয়েছে বলে আক্রমণের যুক্তি হিসাবে তার পোস্টে তিনটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন দিলীপ।
এক, ভিক্টোরিয়ায় মমতার মুখে ‘বাংলাদেশি স্লোগান’।
দুই. অতীতে তৃণমূলের প্রচারে বাংলাদেশি অভিনেতা।
তিন. তৃণমূলের উদ্যোগে পুজোয় বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে নিয়ে আসা।
গত লোকসভা নির্বাচনের সময় অভিনেতা ফেরদৌস রায়গঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী কানহাইয়ালাল আগরওয়ালের সমর্থনে প্রচার করেন। সেই সময়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি দিলীপ মন্তব্য করেছিলেন, ‘এবার হয় তো ইমরান খানকেও প্রচারে আনবে তৃণমূল!’ সেই জল অনেক দূর গড়ায়। শেষ পর্যন্ত ফেরদৌসকে কালো তালিকাভুক্ত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একা দিলীপই নন, এ বিষয়ে সরব গোটা বিজেপিই।
তৃণমূলের বক্তব্য
বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি দিলীপ ঘোষের পোস্টের পরেই কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র তথা সাবেক সংসদ সদস্য কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘এখন বিজেপি দলটাই ‘গ্রেটার তৃণমূল’ হয়ে গিয়েছে। সেই হতাশারই প্রকাশ দিলীপ ঘোষের এই পোস্টে।’
তৃণমূলের প্রবীণ সংসদ সদস্য সৌগত রায়ের মন্তব্য, ‘দিলীপ ঘোষের এসব কথার কোনো জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।’ (যুগান্তর)
(পুবের আলো / সিয়াম)