নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদের মির্জা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দলের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সোচ্চার। এ ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বহু জলও ঘোলা হয়েছে, এক সাংবাদিকের প্রাণও গেছে। অবশেষে নমনীয় হয়েছেন আলোচিত কাদের মির্জা।
গতকাল বসুরহাটে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তিনি সব কর্মসূচিও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। একইসঙ্গে নিজের অনুসারীদের শান্ত থাকার নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, ‘কেউ মারলে আমাকে বলবেন, কারো গায়ে হাত দেবেন না।’
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে কাদের মির্জার ধারাবাহিক বিষোদগার, হরতাল ও বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। ক্ষুব্ধ নেতারা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। এতে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন কাদের মির্জা।
এরই মধ্যে বসুরহাটে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে স্থানীয় একজন সাংবাদিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গতকাল রবিবার মাঠে নেমেছেন ওই অঞ্চলের সাংবাদিকরা।
রবিবার সকালে কাদের মির্জা তার অনুসারীদের নিয়ে বসুরহাট বাজারে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সেখানে তিনি বসুরহাটের পরিস্থিতি, শনিবার রাতে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহিত দিয়ে জেলা কমিটির সুপারিশ ও পরে সেটা প্রত্যাহার করা নিয়ে কথা বলেন।
সমাবেশে নিজের অনুসারীদের উদ্দেশে কাদের মির্জা বলেন, ‘একরামের (নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী) অস্ত্র নিয়ে বাদল (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল) তার অনুসারীদের নিয়ে আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। গুলিতে একজন সংবাদকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার নেতার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমাকে বহিষ্কার করেছিল একরাম, নেত্রী (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন এটি প্রত্যাহার করার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। নেত্রীর ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আপনারা কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। এখানে অপরাজনীতি থাকবে না, কেউ কারো গায়ে হাত দেবেন না। আপনাদের কেউ মারলে আমাকে বলবেন। কোনো মারামারি করবেন না।’
এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাদের মির্জা নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে এবং ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পূর্ব ঘোষিত হরতালসহ সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের, আমি রাজনীতি করি আওয়ামী লীগের। আমি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল, আমার নেত্রী শেখ হাসিনা যখন যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নেব। নেত্রী যেহেতু বলেছেন নোয়াখালীর বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, সে জন্য আমি এরই মধ্যে আমার দেওয়া সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছি এবং আমি চাই নোয়াখালী আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা যেন দলে স্থান পায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাজনীতির চলমান সংকট নিরসনে আমাদের সকলের আস্থার শেষ ঠিকানা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমাদের এর আগে ঘোষিত সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিলাম। আশা করি জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আমাদের নেতা জনাব ওবায়দুল কাদের সাহেবের হস্তক্ষেপে সব সমস্যার সমাধান অতি শিগগিরই হবে।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের চাপরাশিরহাট পূর্ববাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে চিত্র ধারণের সময় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির।
গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
সূত্রঃ ব্রেকিংনিউজ
পুবের আলো/সুমন